জন্মই আমার আজন্ম পাপ

ওর বিয়ে পরশু । আমিই ওর সবচাইতে কাছের বন্ধু ।
তাই আমার ব্যস্ততাটা একটু বেশি । হাসিমুখে সব
করে যাচ্ছি । ফুল কেনা, বাসর ঘর সাজানো, শপিং।
অথচ ও একটুও বুঝতে পারছে না আমার বুক
ফেটে যাচ্ছে।
শিহাব আর আমি। সেই ছোটবেলা থেকেই একসাথে বড়
হওয়া, মারামারি, পড়াশোনা। আমার প্রতি তার
কেয়ারিং টা ছিল একটা ভাল বন্ধুর
প্রতি যেমনটা হওয়া উচিত ঠিক সেরকম। কিন্তু
আমিই দিনের পর দিন নিজের ওপর কন্ট্রোল
হারিয়ে ফেলেছি। কতরাত নির্ঘুম কাটিয়েছি তার
হিসেব আমি নিজেও জানি না।
ও যখন তিশার কথা আমার কাছে প্রথম বলে সেদিন
আমরা কলেজ মাঠে বসে ছিলাম । আমি মাঠের
সামনের নদীর দিকে তাকিয়ে আছি আর ও
একমনে তিশার কথা বলে যাচ্ছে । আমার কেমন
অস্থির লাগছিল তা একমাত্র আমি জানি।
আমি , শিহাব আর তিশা একসাথে ঘুরতাম। ওরা যখন
খুনসুটি করত , আমি অবাক হয়ে দেখতাম তিশা কত
ভাগ্যবান শিহাবের মত কেউ তার পাশে সারা জীবন
থাকবে। ওরা মাঝে মাঝে কলেজ মাঠে বসে শেষ
বিকেলের সূর্য কিংবা সন্ধ্যার তারা দেখত। আমি দূর
থেকে ওদের দেখতাম। বুকের একপাশে চিন চিন
ব্যথা টের পেতাম।
আমি যদি মেয়ে হতাম ! তাহলে হয়ত তিশার জায়গায়
আমি থাকতাম।
এত ভালবাসি কিন্তু বলতে পারি না। এযে কেমন
যন্ত্রণা !
তিশার সাথে কোনদিন ঝগড়া করে যদি কোনদিন
শিহাব খেত না । সেদিন আমিও উপোস থাকতাম। ওর
জন্মদিনে ও যখন তিশার সাথে ব্যস্ত কেক
কাটা নিয়ে আমি তখন একলা ঘরে মোম
জ্বালিয়ে ওকে ভেবে উইশ করি।
আমার খুব কষ্ট হত যখন শিহাব আমার জন্মদিনের
কথা মনে রাখত না। পহেলা বৈশাখ, ভেলেন্টাইনস
ডে আমি একা রাস্তায় উদভ্রান্তের মত
হেঁটে যেতাম। আমার জন্যে কেউ নেই।
আমি কাউকে কষ্ট দেখাই না। সবাইকে দেখাই
আমি সুখী।
কিরে সব রেডি ? শিহাব আমায় বলল ।
আমি মুখে একটা হাসি টেনে বললাম, হ্যাঁ।
শিহাব আজ বরবেশে, ক্রিম কালারের শেরওয়ানি।
মাথায় সোনলী পাগড়ি। আমি প্রাণভরে দেখি।
একটু পর বিয়ে পড়ানো শুরু হল। শিহাব তিশার আজ
স্বপ্নের দিন। ওদের নতুন সংসার হবে। শিহাব
তিশার হাতে হাত রাখে। সবাই উইশ করে।
আমি তখন খোলা বারান্দায় আকাশের
দিকে তাকিয়ে থাকি। আকাশের বুক জুড়ে অসংখ্য
তারা। আমার একমুঠো দীর্ঘশ্বাস ছড়িয়ে দিলাম
বাতাসের বুকে।
আমি সমকামী।
আমার জন্মই হয়েছে ভালোবাসা বুকের ভিতর
নিয়ে একা একা পথ চলার জন্যে।
জন্মই আমার আজন্ম পাপ।